ফাইলেরিয়াসিস বা গোদরোগ বাংলাদেশের একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা যা পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বোঝা স্বরূপ। বিশ্বের ৭৩টি দেশে এ রোগ বিদ্যমান। অপুষ্টি, দারিদ্রতা, সামাজিক অবস্থান, কুসংস্কার, অশিক্ষা ও বসতবাড়ীর নোংরা পরিবেশ, ঘন-বসতিপূর্ণ বাসস্থান, স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব ইত্যাদি এই রোগ সংক্রমণের জন্য দায়ী। ১৯৯৭ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের মধ্যে সারা বিশ্ব থেকে ফাইলেরিয়াসিস নির্মূলের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হতে এই রোগ নির্মূলের লক্ষে কাজ করে। ইতিমধ্যে আক্রান্ত প্রায় ৩.৫ লক্ষ লোকের মধ্যে গোদ রোগ নানা মাত্রায় বিরাজ করছে। নিয়মিত ঔষধ সেবনে গোদ রোগের সংক্রমণ বন্ধ হয়, তবে গোদ রোগের কারণে যে বিকলাঙ্গতা তা সম্পূর্ণ ভাল না হলেও যথাযথ সেবার মাধ্যমে রোগাক্রান্তদের জীবন সহনীয় করা যেতে পারে। বিশ্বের প্রথম ফাইলেরিয়া হাসপাতাল নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ধলাগাছ মৌজায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত নিয়মিত সারাদেশের ফাইলেরিয়া রোগিদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ, ভারত, চীন, শ্রীলংকা, ব্রাজিল, আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে ফাইলেরিয়াসিস রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি। বাংলাদেশে ষাটের দশকের আগে থেকেই এ রোগ বিদ্যমান। আমাদের দেশের ৩৪ জেলায় ফাইলেরিয়া বা গোদ আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা অনেক বেশি। তার মধ্যে ১৯টি জেলায় যথা- পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারী, দিনাজপুর, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি জেলায় এ রোগের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি।
পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার ২০২০ সালে বাংলাদেশকে ফাইলেরিয়া মুক্ত ঘোষণা করলেও এখনও বাংলাদেশের সর্বত্র ফাইলেরিয়া রোগী বিদ্যমান। তাই বাংলাদেশে ফাইলেরিয়া রোগের উন্নত চিকিৎসার লক্ষে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাব সারাদেশে ফাইলেরিয়া রোগীদের ডাটাবেজ তৈরিসহ সারাদেশের বিপিডিএ এর সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ‘লেপ্রা বাংলাদেশ’র সাথে বিপিডিএ সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে। ওইসব প্রশিক্ষণে এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড এর অপব্যবহার রোধ এবং উন্নত চিকিৎসা প্রদানে টেলিমেডিসিনের ব্যবহার এবং প্রাথমিক চিকিৎসার মানোন্নয়নে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও ফাইলেরিয়া বা গোদ রোগ নির্মূলে সৈয়দপুর ফাইলেরিয়া এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ল্যাবে “ফাইলেরিয়াসিস কন্ট্রোল প্রোগ্রাম” নামে আলাদা একটি ইউনিট রয়েছে।